ছলাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি

ছলাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি-

ছলাত এর প্রস্তোতি
পবিত্রতা অর্জন৷ ১:- বড় পবিত্রতা বা ফরয গোসলের পূর্বে অযু করতে হবে তারপর আর ওজু না ভাঙলে ফরয গোসলের পরে নতুন করে অযু করার দরকার নেই ।(বুখারী হাদীস নং ২৪৮- পৃষ্ঠা ১৩৪) পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করার “নিয়ত” করে নিতে হবে। এরজন্য  কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে কিছু বলতে হবেনা। শুধু গোসল শুরু করার আগে এই বিষয়টা অন্তরে খেয়াল থাকলেই হবে। “বিসমিল্লাহ” বলে শুরু করতে হবে। ওযু বা গোসলের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা সুন্নত, ফরয নয়। সবসময় চেষ্টা করতে হবে বলার জন্য, তবে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলেও ওযু/গোসল হয়ে যাবে। আর বাথরুমে ওযু করলে মনে মনে বিসমিল্লাহ বলবে, উচ্চারণ করে বলবেনা।
২:- ছোট পবিত্রতা বা অযুকরা
১. নাকে পানি দিবে  মুখে পানি নিয়ে কুলি করবে মুখমন্ডল ধৌত করবে ৩ বার। কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতি পর্যন্ত ও থুতনীর নিচ পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। ২.কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত। ৩.মাথা মাসা করবে একবার। ৪. টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান পা পরে বাম পা।
অযুর সময় ঘাড় মাসাহ করা যাবে না, মাথা মাসাহ করতে হবে ১বার এবং তার পদ্ধতি হচ্ছে ২হাতকে মাথার সামনে থেকে পিছনে নিয়ে যেতে হবে এবং পিছন থেকে সামনে আনতে হবে তারপর ২তর্জনী আঙ্গুল ২কানের ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং তারপর কানের ছিদ্রের উপরের ভাজ তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে এবং শেষে ২বৃদ্ধাঙ্গুল দারা ২কানের পিছনে মূছে দিতে হবে। অন্যান্য অঙ্গগুলো ৩বার করে ধুতে হবে এবং হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে ভালকরে খিলাল করে পরিষ্কার করতে হবে।
মুখে পানি নিয়ে গড়গড়া করতে হবে এবং নাকে পানি নেওয়ার সময় পানি নাকের মধ্যে টেনে নিতে হবে তারপর নাক ঝেরে ফেলতে হবে।(বুখারী হাদীস নং ১৬৪-১৬৫-পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮):- সিয়াম পালন অবস্থায় গড়গড়া ও নাকে টানা যাবে না৷
স্বলাতের সংক্ষিপ্ত নিয়ম
১:- স্বলাতে দাঁড়িয়ে মুখে নিয়ত পড়তে হবে না, কোন ব্যক্তি স্বলাত আদায় করবে বলেই সে স্বলাতে দাড়িয়েছে, এটাই তার নিয়ত। সে যদি স্বলাতের নিয়ত না করতো তবে সে অযুও করতো না এবং স্বলাতেও দাঁড়াতো না আর সবচেয়ে বড় কথা মুখে নিয়ত করার কোন প্রমাণ নেই সুতরাং একাজ বিদয়াত)।(বুখারী ৭৯৩, ৮০৩ -পৃষ্ঠা ৩৮৫, ৩৯০)
২:-জামাত স্বলাতের কাতারে একে অন্যের পায়ের সাথে পা এবং কাধের সাথে কাধ মিলীয়ে দাড়াতে হবে অর্থাৎ একে অন্যের মাঝে কোন ফাকা রাখা যাবে না।(বুখারী হাদীস নং ৭২৫ - পৃষ্ঠা ৩৪৯)
৩:- স্বলাতে দাড়িয়ে কোন কাজ ইমামের আগে বা সাথে সাথে করা যাবে না বরং ইমাম করার পর করতে হবে।(বুখারী হাদীস নং ৬৮৯, ৬৯১ - পৃষ্ঠা ৩৩৩-৩৩৪)
৪:- রুকু এবং সেজদা ধীর-স্থিরতার সাথে করতে হবে। কাঁকের মতো দ্রুত ঠোকর মারলে স্বলাত হবে না।(বুখারী হাদীস নং ৭৯১, ৭৯৩ - পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৮৫) ৫:- সলাতের পদ্ধতিতে নারি এবং পুরুষের কোন পার্থক্য নেই, সলাত আদায়ের পদ্ধতি উভয়ের জন্য একই রকম। (বুখারি হাদিস ৬৩১)
ছালাত:-
(১) তাকবীরে তাহরীমা : ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে হাত বাঁধবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধবে। অতঃপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।-
اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَد-উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হ’তে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হ’তে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা’।[2]একে ‘ছানা’ বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। তবে এই দো‘আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ। P1. বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।
(২) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ : দো‘আয়ে ইস্তেফতা-হ বা ‘ছানা’ পড়ে আ‘ঊযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাক‘আতের শুরুতে কেবল বিসমিল্লাহ বলবে। জেহরী ছালাত হ’লে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে ‘আমীন’ বলবে।
সূরায়ে ফাতিহা (মুখবন্ধ) সূরা-১, মাক্কী :
أَعُوْذُ بِا للہِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ◌ بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)
উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম। বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম। ১.আলহাম্দু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন ৷
২.আর রহমা-নির রহীম (৩) মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন ৷ ৪.ইইয়া-কা না‘বুদু ওয়া ইইয়া-কা নাস্তা‘ঈন ৷ ৫.ইহ্দিনাছ ছিরা-ত্বাল মুস্তাক্বীম (৬) ছিরা-ত্বাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম ৷ ৭.গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়া লায্ যোয়া-ল্লীন।
অনুবাদ : আমি অভিশপ্ত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)। ১.যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক ৷ ২.যিনি করুণাময় কৃপানিধান ৷ ৩.যিনি বিচার দিবসের মালিক ৷ ৪.আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি ৷ ৫.আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন! ৬.এমন লোকদের পথ, যাঁদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন ৷ ৭.তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে’। আমীন! (হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন)। P2. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
(৩) ক্বিরাআত : সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হ’লে প্রথম দু’রাক‘আতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হ’লে জেহরী ছালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম বলে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে। P3. তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু
(৪) রুকূ : ক্বিরাআত শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকূর দো‘আ পড়বে। রুকূর দো‘আ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ‘সুবহা-না রব্বিয়াল আ`যিম।কমপক্ষে তিনবার পড়বে। (তিরমিজি, আবু দাউদ) অর্থ : “মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান" কমপক্ষে তিনবার পড়বে। অথবা".«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي».উচ্চারণ : সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফির লী। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, মুসনাদে আহমদ) অর্থ : “হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন৷ অথবা".«اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِيْ وَ بَصَرِيْ وَ مُخِّي وَ عَظْمِيْ وَ عَصَبِيْ - উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকাআতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু। খাশাআ লাকা সামঈ, ওয়া বাসারি, ওয়া মুখখি ওয়া আজমি, ওয়া আসাবি। অর্থ :  “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রুকু করলাম, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আপনার নিকট অবনত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।” (মুসলিম, মিশকাত)
(৫) ক্বওমা : অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘ : «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ». বাংলা উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ। বাংলা অর্থ : (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)।)।” [বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ২/২৮২, নং ৭৯৬।] অতঃপর ‘ক্বওমা’র দো‘আ একবার পড়বে। ক্বওমার দো‘আ : رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‘রববানা লাকাল হাম্দ’  (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)।  অথবা" পড়বে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। ক্বওমার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। P5. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯১৯ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৬; ছিফাত ১৪৭ পৃঃ, টীকা ২-৩ দ্রঃ।
(৬) সিজদা : ক্বওমার দো‘আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশী বেশী দো‘আ পড়বে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ২পা খাড়া ভাবে মিলে যাবে ও পিঠ সোজা থাকবে । যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। সিজদার দো‘আ : ১. سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা) অর্থঃ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ’। কমপক্ষে তিনবার পড়বে।(মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ) অথবা" ২. سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي উচ্চারণ : সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফির লী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)অর্থ : “হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।” অথবা" ৩. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَউচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিরিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উক্বুবাতিকা, ওয়া আঊযু বিকা মিনকা, লা উহ্‌সী সানা-আন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিকা। (মুসলিম)অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অসন্তুষ্টি থেকে, আর আপনার নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার নিকটে আপনার (পাকড়াও) থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গুনতে সক্ষম নই; আপনি সেরূপই, যেরূপ প্রশংসা আপনি নিজের জন্য করেছেন”। অথবা" ৪. سُبوحٌ، قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِউচ্চারণ : সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূহ। (মুসলিম, আবু দাউদ)অর্থ : (আপনি) সম্পূর্ণরূপে দোষ-ত্রুটিমুক্ত, অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত; ফেরেশতাগণ ও রূহ এর রব্ব।” অথবা" ৫. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَّتَهُ وَسِرَّهُউচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউয়ালাহু ওয়া ‘আখিরাহু, ওয়া ‘আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু। (মুসলিম)অর্থ : “হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন— তার ক্ষুদ্র অংশ, তার বড় অংশ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ।” অথবা" ৬. اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسنُ الْخَالِقينَউচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়া সাওয়্যারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্লাহু আহ্‌সানুল খালিক্বীন। (মুসলিম)অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিজদা করেছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য; যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন, আর তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্‌ অত্যন্ত বরকতময়।” অথবা" ৭. سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ، وَالْمَلَكُوتِ، وَالْكِبْرِيَاءِ، وَالْعَظَمَةِউচ্চারণ : সুবহা-নাযিল জাবারূতি, ওয়াল মালাকুতি, ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাতি। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)অর্থ : “পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যিনি প্রবল প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দো‘আ পড়বে।
 দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ  ১. :اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ- উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ার্ঝুক্বনী । অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[3] অথবা"২.  اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি।(মুসলিম, মিশকাত পৃঃ ৭৭ হা/ ৮৯৩) অর্থ : হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন। অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দো‘আ পড়বে।  ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরা-হাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। P6. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৪২ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৮৩৪ ‘আযান’ অধ্যায়-২, ‘সালামের পূর্বে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৪৯।
(৭) বৈঠক : ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে বুকে হাত বাঁধবে। । আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হ’লে বেশী বেশী করে অন্য দো‘আ পড়বে। ১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এসময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না। বৈঠকের দো‘আ সমূহ : (ক) তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):
اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ- উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু। অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (বুঃ মুঃ)।[4] (খ) দরূদ :
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রক্তা ‘আলা ইব্রা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ । অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।[5] (গ) দো‘আয়ে মাছূরাহ :
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدَكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ- উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগ্ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহাম্নী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’ । অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।[6] এর পর অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়তে পারে। P7. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০, ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮। ‘সালাম ফিরানোর পরে দো‘আ সমূহ’ সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য।
(৮) সালাম : দো‘আয়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’  (আল্লাহর পক্ষ হ’তে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক!) বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ (এবং তাঁর বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। এভাবে ছালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহ সবার বড়) ও তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লা-হ’ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলে নিম্নের দো‘আসমূহ এবং অন্যান্য দো‘আ পাঠ করবে। এ সময় ইমাম হ’লে ডাইনে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। অতঃপর সকলে নিম্নের দো‘আ সহ অন্যান্য দো‘আ পাঠ করবে।-
اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ- উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম । অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’। এটুকু পড়েই উঠে যেতে পারেন। [7]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনা গন্ডা সম্পর্কিত তথ্য

খারেজী সম্প্রদায় কারা?

কাকড়া খাওয়া হারাম না হালাল?