তাকে বাবা ডাকা নিষেধ ছিলো
আমার জন্মদাতা কে আমি কখনো বাবা বলে ডাকতে পারিনি....
তাকে বাবাআমার জন্মদাতা কে আমি কখনো বাবা বলে ডাকতে পারিনি....
তাকে বাবা ডাকা নিষেধ ছিলো...
কারন সে ছিলো পাগল....
পাগলদের "পাগল" ছাড়া আর কোন পরিচয় থাকেনা...
আমার মা ছিলোনা...
শুনেছিলাম আমার মা একজন ভয়ানক খারাপ মহিলা..
সে আমাকে ফেলে চলে গেছিলো....
ছোটবেলাতে আমাকে এভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলা হয়েছিল...
আমি জানতাম যে,আমার জন্মদাতা পাগল আর জন্মদাত্রী ডাইনী....
"বাবা-মা" শব্দ দুটির সাথে আমি পরিচিত হয়েছিলাম প্রথম যেদিন স্কুলে যাই তখন...
স্কুলের বাকি ছেলে মেয়েদেরকে কিছু লোকজন নিতে আসছিলো...
যাদের কে তারা বাবা-মা বলে ডাকছিল...
আর আমাকে নিতে গেছিলো "নিতা মিস"
আমাকে দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলা কে রাখা হয়েছিলো সে....
আমার কোন মানুষ বন্ধুবান্ধব ছিলোনা....
বন্ধু বলতে ছিলো প্রচুর খেলনা....
আমি স্কুলে যাবার আগে জানতাম না যে,মানুষ দের সাথে খেলা যায়....
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা...
অর্থ-প্রাচুর্য...সব ছিল...
দাদা-দাদী আমাকে সব কিছু দিয়েছিলেন...
শুধুমাত্র স্নেহ ছাড়া....
একবার স্কুলে আমার এক ক্লাসমেট জিজ্ঞাসা করেছিলো,"তোমার বাবা-মা কেন তোমায় নিতে আসেনা?তোমার কি বাবা মা নাই?"
আমি বাড়ি ফিরে দাদী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম...
"বাবা-মা কি?আমার কেন বাবা মা নাই?"
দাদী তখন আমাকে বলেছিলেন,"পাগলের জন্ম তুই...আর মা তো তোর ডাইনী....আবার বাবা মা খোঁজে....শখ কত!!!!"
ছোট্ট আমি খুব কেঁদেছিলাম সেদিন...
আর কখনো বাবা মার কথা জিজ্ঞাসা করিনি...
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে....
কিছুতেই তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিলো না...
অনেক কাকুতিমিনতি করে মানুষ টা আমার সাথে ১০ মিনিট এর জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন...
কিন্তু কাজের লোকের উপস্থিতি তে...
জীবনে এই প্রথম কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো...
আমি অবাক হয়েছিলাম খুব...
মানুষ টা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন...
তার বুকের মধ্যে খুব আপন লাগছিলো আমার...
কারন সে আমার মামা ছিল...
মামা লুকিয়ে আমাকে একটা ডায়েরী আর একটা বিয়ের শাড়ী দিয়ে গেছিলেন...
ওটা নাকি আমার মায়ের বিয়ের শাড়ী ছিলো..
মাথায় হাত দিয়ে অনেক দোয়া করেছিলেন আমাকে...
এরপর আর কোনদিন মামাকে দেখিনি আমি...
ডায়েরী টা পড়ে জানতে পেরেছিলাম সব....
আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের আগে অন্যকেউ ছিলো...সে যাবার পর বাবার হৃদয়ের গহীন টা এতই আধার হয়ে গেছিলো যে,আমার মা সেখানে আর আলো আনতে পারেন নি...
নিজের অনিচ্ছাতে শুধুমাত্র বাবা মায়ের চাপে আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন বাবা....
মাকে কখনো শারিরীক ভাবে আঘাত করেন নি তিনি...
কিন্তু মানসিক ভাবে আমার মা প্রতিনিয়ত খুন হয়েছে...
বাবা নেশা করে ঘরে ফিরতো...
মা শত চেষ্টা করেও তাকে ঠিক করতে পারেন নি...
পরিনামে শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে মিলতো ভৎর্সনা...
"কেমন মেয়ে মানুষ তুমি??স্বামী কে ঘরে রাখতে পারোনা!!!!"
কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছিলো না...
এর মধ্যে মায়ের জঠরে এলাম আমি...
মা ভেবেছিলেন আমার আগমনে হয়তোবা সব ঠিক হবে...
যেদিন আমার জন্ম হলো...
তার দুইদিনের মাথায় বাবা চিরতরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন...
মা আমার দিশেহারা হয়ে গেছিলেন....
সবার কাছে আমি হয়ে গেলাম কুফা বাচ্চা আর আমার মা অপয়া নারী...
আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো....আমাকে তার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো...
লজ্জায়,অপমানে জননী আমার নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন....
আমি কখনো আমার মাকে দেখিনি...
কিন্তু ডায়েরী টার এক ফাঁকে একটা সাদাকালো ছবিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো....
হ্যা আমার মায়ের ছবি এটা....
বুকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছি সেদিন...
ইচ্ছা করছিলো দাদা দাদী কে খুন করে ফেলতে....
কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার....
**********************
কাল আমার বিয়ে.....
হ্যা আমার বিয়ে কিন্তু আমার মতামত এর কোন প্রয়োজন নাই এখানে....
আমি জানিনা কার সাথে আমার বিয়ে...
ফুফুকে শুধু দুটো অনুরোধ করতে পেরেছি...
আমার মায়ের শাড়ী টা পরে বিয়ে করতে চাই আমি....
আর আমার বাবাকে একবার দেখতে চাই...
এই জীবনে প্রথম মুখ ফুঁটে কিছু বলেছি আমি....
হ্যা আমার মায়ের শাড়ী টা পরেই বিয়ে হবে আমার...
কিন্ত পরের অনুরোধ টা মঞ্জুর হলো কিনা বুঝতে পারিনি...
বিয়ের দিন সকালে আমাকে ডাকা হলো নিচে একটা ঘরে...
শেকলে বাঁধা নোংরা পোশাক আরর চুলদাড়ি তে চুপ করে বসে থাকা মানুষ টা কে দেখে বুঝতে দেরী হলোনা যে,এটাই আমার পাগল বাবা....
সে নাকি খুব ভয়ানক পাগল....
খুব আক্রমণাত্মক...
তাই তাকে বেধে রাখা....
আমি তার বাঁধন খুলে দিতে বললাম....
সবাই কে চলে যেতে বললাম.....
কেউ রাজী হলোনা....
পরে দাদার পায়ে ধরে চাইলাম এটুক...
দয়া হলো তার....
খুলে দেওয়া হলো বাবার বাঁধন...
কিন্তু সময় একঘণ্টা...
ঘরে বাবা আর আমি...
বাবাকে ডাকলাম...
"ও বাবা,তোমার মেয়ে আমি....দেখো আমার দিকে..."
ফ্যালফ্যাল করে মানুষ টা তাকিয়ে রইলেন...
একটু পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদলেন...
কাঁদলাম আমিও...
এই প্রথম বাপ বেটী তে দেখা....
কোন কথা বললেন না বাবা...
নিজ হাতে তাকে গোসল করালাম...নতুন কাপড় পরালাম...খাইয়ে দিলাম...
বাবাকে নেওয়ার জন্য পাগলা গারদের গাড়ী চলে এলে বাবা নিজেই শেকল পরলেন...
গাড়িতে উঠার আগে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন...
"ক্ষমা করে দিস মা....সুখী হ..."
আর পিছু ফিরে তাকান নি....
সম্ভবত বাবার সাথেও এই শেষ দেখা আমার....
বিয়েতে এক টা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যৌতুক হিসেবে সব কিছু দিয়েছেন দাদা দাদী আমাকে....
আর বিদায় দেওয়ার আগে আমাকে বলেছিলেন,
আমি যেন আরর কখনওই এ বাড়ি তে না আসি....
আমি হেসে বলেছিলাম,
"দয়া করে আমায় আশ্রয় দিয়েছো,বড় করেছো তাই ই অনেক....দোয়া কইরো আর কখনো যেন আমার মরা মুখ টাও না দেখতে হয় তোমাদেরকে...."
গাড়িতে উঠার পর ঘোমটার আড়ালে কেনো জানি দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে....
অচেনা একটা হাত শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো,
"নিশি আমি তোমায় কখনওই আগে দেখিনি...তোমার ছবি দেখেছি শুধু...আমি তোমার সম্পর্ক তে সব ই জেনেছি...তোমার বাবার কাছ থেকে....
উনার চিকিৎসক আমি....
তুমি ভেবোনা আমি অনুগ্রহ করছি তোমার উপর....
আমি নিজেই তোমার দাদার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম...আর উনি যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছিলেন আমি সবব ফিরিয়ে দিয়েছি....
আজ থেকে তুমি আমার আমানত..."
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম....
অচেনা একটা কাধ যে নির্ভরতার আশ্রয় হয়ে যেতে পারে নিমিষেই...
জানা ছিলোনা.... ডাকা নিষেধ ছিলো...
কারন সে ছিলো পাগল....
পাগলদের "পাগল" ছাড়া আর কোন পরিচয় থাকেনা...
আমার মা ছিলোনা...
শুনেছিলাম আমার মা একজন ভয়ানক খারাপ মহিলা..
সে আমাকে ফেলে চলে গেছিলো....
ছোটবেলাতে আমাকে এভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলা হয়েছিল...
আমি জানতাম যে,আমার জন্মদাতা পাগল আর জন্মদাত্রী ডাইনী....
"বাবা-মা" শব্দ দুটির সাথে আমি পরিচিত হয়েছিলাম প্রথম যেদিন স্কুলে যাই তখন...
স্কুলের বাকি ছেলে মেয়েদেরকে কিছু লোকজন নিতে আসছিলো...
যাদের কে তারা বাবা-মা বলে ডাকছিল...
আর আমাকে নিতে গেছিলো "নিতা মিস"
আমাকে দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলা কে রাখা হয়েছিলো সে....
আমার কোন মানুষ বন্ধুবান্ধব ছিলোনা....
বন্ধু বলতে ছিলো প্রচুর খেলনা....
আমি স্কুলে যাবার আগে জানতাম না যে,মানুষ দের সাথে খেলা যায়....
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা...
অর্থ-প্রাচুর্য...সব ছিল...
দাদা-দাদী আমাকে সব কিছু দিয়েছিলেন...
শুধুমাত্র স্নেহ ছাড়া....
একবার স্কুলে আমার এক ক্লাসমেট জিজ্ঞাসা করেছিলো,"তোমার বাবা-মা কেন তোমায় নিতে আসেনা?তোমার কি বাবা মা নাই?"
আমি বাড়ি ফিরে দাদী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম...
"বাবা-মা কি?আমার কেন বাবা মা নাই?"
দাদী তখন আমাকে বলেছিলেন,"পাগলের জন্ম তুই...আর মা তো তোর ডাইনী....আবার বাবা মা খোঁজে....শখ কত!!!!"
ছোট্ট আমি খুব কেঁদেছিলাম সেদিন...
আর কখনো বাবা মার কথা জিজ্ঞাসা করিনি...
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে....
কিছুতেই তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিলো না...
অনেক কাকুতিমিনতি করে মানুষ টা আমার সাথে ১০ মিনিট এর জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন...
কিন্তু কাজের লোকের উপস্থিতি তে...
জীবনে এই প্রথম কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো...
আমি অবাক হয়েছিলাম খুব...
মানুষ টা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন...
তার বুকের মধ্যে খুব আপন লাগছিলো আমার...
কারন সে আমার মামা ছিল...
মামা লুকিয়ে আমাকে একটা ডায়েরী আর একটা বিয়ের শাড়ী দিয়ে গেছিলেন...
ওটা নাকি আমার মায়ের বিয়ের শাড়ী ছিলো..
মাথায় হাত দিয়ে অনেক দোয়া করেছিলেন আমাকে...
এরপর আর কোনদিন মামাকে দেখিনি আমি...
ডায়েরী টা পড়ে জানতে পেরেছিলাম সব....
আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের আগে অন্যকেউ ছিলো...সে যাবার পর বাবার হৃদয়ের গহীন টা এতই আধার হয়ে গেছিলো যে,আমার মা সেখানে আর আলো আনতে পারেন নি...
নিজের অনিচ্ছাতে শুধুমাত্র বাবা মায়ের চাপে আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন বাবা....
মাকে কখনো শারিরীক ভাবে আঘাত করেন নি তিনি...
কিন্তু মানসিক ভাবে আমার মা প্রতিনিয়ত খুন হয়েছে...
বাবা নেশা করে ঘরে ফিরতো...
মা শত চেষ্টা করেও তাকে ঠিক করতে পারেন নি...
পরিনামে শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে মিলতো ভৎর্সনা...
"কেমন মেয়ে মানুষ তুমি??স্বামী কে ঘরে রাখতে পারোনা!!!!"
কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছিলো না...
এর মধ্যে মায়ের জঠরে এলাম আমি...
মা ভেবেছিলেন আমার আগমনে হয়তোবা সব ঠিক হবে...
যেদিন আমার জন্ম হলো...
তার দুইদিনের মাথায় বাবা চিরতরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন...
মা আমার দিশেহারা হয়ে গেছিলেন....
সবার কাছে আমি হয়ে গেলাম কুফা বাচ্চা আর আমার মা অপয়া নারী...
আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো....আমাকে তার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো...
লজ্জায়,অপমানে জননী আমার নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন....
আমি কখনো আমার মাকে দেখিনি...
কিন্তু ডায়েরী টার এক ফাঁকে একটা সাদাকালো ছবিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো....
হ্যা আমার মায়ের ছবি এটা....
বুকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছি সেদিন...
ইচ্ছা করছিলো দাদা দাদী কে খুন করে ফেলতে....
কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার....
**********************
কাল আমার বিয়ে.....
হ্যা আমার বিয়ে কিন্তু আমার মতামত এর কোন প্রয়োজন নাই এখানে....
আমি জানিনা কার সাথে আমার বিয়ে...
ফুফুকে শুধু দুটো অনুরোধ করতে পেরেছি...
আমার মায়ের শাড়ী টা পরে বিয়ে করতে চাই আমি....
আর আমার বাবাকে একবার দেখতে চাই...
এই জীবনে প্রথম মুখ ফুঁটে কিছু বলেছি আমি....
হ্যা আমার মায়ের শাড়ী টা পরেই বিয়ে হবে আমার...
কিন্ত পরের অনুরোধ টা মঞ্জুর হলো কিনা বুঝতে পারিনি...
বিয়ের দিন সকালে আমাকে ডাকা হলো নিচে একটা ঘরে...
শেকলে বাঁধা নোংরা পোশাক আরর চুলদাড়ি তে চুপ করে বসে থাকা মানুষ টা কে দেখে বুঝতে দেরী হলোনা যে,এটাই আমার পাগল বাবা....
সে নাকি খুব ভয়ানক পাগল....
খুব আক্রমণাত্মক...
তাই তাকে বেধে রাখা....
আমি তার বাঁধন খুলে দিতে বললাম....
সবাই কে চলে যেতে বললাম.....
কেউ রাজী হলোনা....
পরে দাদার পায়ে ধরে চাইলাম এটুক...
দয়া হলো তার....
খুলে দেওয়া হলো বাবার বাঁধন...
কিন্তু সময় একঘণ্টা...
ঘরে বাবা আর আমি...
বাবাকে ডাকলাম...
"ও বাবা,তোমার মেয়ে আমি....দেখো আমার দিকে..."
ফ্যালফ্যাল করে মানুষ টা তাকিয়ে রইলেন...
একটু পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদলেন...
কাঁদলাম আমিও...
এই প্রথম বাপ বেটী তে দেখা....
কোন কথা বললেন না বাবা...
নিজ হাতে তাকে গোসল করালাম...নতুন কাপড় পরালাম...খাইয়ে দিলাম...
বাবাকে নেওয়ার জন্য পাগলা গারদের গাড়ী চলে এলে বাবা নিজেই শেকল পরলেন...
গাড়িতে উঠার আগে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন...
"ক্ষমা করে দিস মা....সুখী হ..."
আর পিছু ফিরে তাকান নি....
সম্ভবত বাবার সাথেও এই শেষ দেখা আমার....
বিয়েতে এক টা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যৌতুক হিসেবে সব কিছু দিয়েছেন দাদা দাদী আমাকে....
আর বিদায় দেওয়ার আগে আমাকে বলেছিলেন,
আমি যেন আরর কখনওই এ বাড়ি তে না আসি....
আমি হেসে বলেছিলাম,
"দয়া করে আমায় আশ্রয় দিয়েছো,বড় করেছো তাই ই অনেক....দোয়া কইরো আর কখনো যেন আমার মরা মুখ টাও না দেখতে হয় তোমাদেরকে...."
গাড়িতে উঠার পর ঘোমটার আড়ালে কেনো জানি দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে....
অচেনা একটা হাত শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো,
"নিশি আমি তোমায় কখনওই আগে দেখিনি...তোমার ছবি দেখেছি শুধু...আমি তোমার সম্পর্ক তে সব ই জেনেছি...তোমার বাবার কাছ থেকে....
উনার চিকিৎসক আমি....
তুমি ভেবোনা আমি অনুগ্রহ করছি তোমার উপর....
আমি নিজেই তোমার দাদার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম...আর উনি যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছিলেন আমি সবব ফিরিয়ে দিয়েছি....
আজ থেকে তুমি আমার আমানত..."
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম....
অচেনা একটা কাধ যে নির্ভরতার আশ্রয় হয়ে যেতে পারে নিমিষেই...
জানা ছিলোনা....
তাকে বাবাআমার জন্মদাতা কে আমি কখনো বাবা বলে ডাকতে পারিনি....
তাকে বাবা ডাকা নিষেধ ছিলো...
কারন সে ছিলো পাগল....
পাগলদের "পাগল" ছাড়া আর কোন পরিচয় থাকেনা...
আমার মা ছিলোনা...
শুনেছিলাম আমার মা একজন ভয়ানক খারাপ মহিলা..
সে আমাকে ফেলে চলে গেছিলো....
ছোটবেলাতে আমাকে এভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলা হয়েছিল...
আমি জানতাম যে,আমার জন্মদাতা পাগল আর জন্মদাত্রী ডাইনী....
"বাবা-মা" শব্দ দুটির সাথে আমি পরিচিত হয়েছিলাম প্রথম যেদিন স্কুলে যাই তখন...
স্কুলের বাকি ছেলে মেয়েদেরকে কিছু লোকজন নিতে আসছিলো...
যাদের কে তারা বাবা-মা বলে ডাকছিল...
আর আমাকে নিতে গেছিলো "নিতা মিস"
আমাকে দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলা কে রাখা হয়েছিলো সে....
আমার কোন মানুষ বন্ধুবান্ধব ছিলোনা....
বন্ধু বলতে ছিলো প্রচুর খেলনা....
আমি স্কুলে যাবার আগে জানতাম না যে,মানুষ দের সাথে খেলা যায়....
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা...
অর্থ-প্রাচুর্য...সব ছিল...
দাদা-দাদী আমাকে সব কিছু দিয়েছিলেন...
শুধুমাত্র স্নেহ ছাড়া....
একবার স্কুলে আমার এক ক্লাসমেট জিজ্ঞাসা করেছিলো,"তোমার বাবা-মা কেন তোমায় নিতে আসেনা?তোমার কি বাবা মা নাই?"
আমি বাড়ি ফিরে দাদী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম...
"বাবা-মা কি?আমার কেন বাবা মা নাই?"
দাদী তখন আমাকে বলেছিলেন,"পাগলের জন্ম তুই...আর মা তো তোর ডাইনী....আবার বাবা মা খোঁজে....শখ কত!!!!"
ছোট্ট আমি খুব কেঁদেছিলাম সেদিন...
আর কখনো বাবা মার কথা জিজ্ঞাসা করিনি...
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে....
কিছুতেই তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিলো না...
অনেক কাকুতিমিনতি করে মানুষ টা আমার সাথে ১০ মিনিট এর জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন...
কিন্তু কাজের লোকের উপস্থিতি তে...
জীবনে এই প্রথম কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো...
আমি অবাক হয়েছিলাম খুব...
মানুষ টা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন...
তার বুকের মধ্যে খুব আপন লাগছিলো আমার...
কারন সে আমার মামা ছিল...
মামা লুকিয়ে আমাকে একটা ডায়েরী আর একটা বিয়ের শাড়ী দিয়ে গেছিলেন...
ওটা নাকি আমার মায়ের বিয়ের শাড়ী ছিলো..
মাথায় হাত দিয়ে অনেক দোয়া করেছিলেন আমাকে...
এরপর আর কোনদিন মামাকে দেখিনি আমি...
ডায়েরী টা পড়ে জানতে পেরেছিলাম সব....
আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের আগে অন্যকেউ ছিলো...সে যাবার পর বাবার হৃদয়ের গহীন টা এতই আধার হয়ে গেছিলো যে,আমার মা সেখানে আর আলো আনতে পারেন নি...
নিজের অনিচ্ছাতে শুধুমাত্র বাবা মায়ের চাপে আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন বাবা....
মাকে কখনো শারিরীক ভাবে আঘাত করেন নি তিনি...
কিন্তু মানসিক ভাবে আমার মা প্রতিনিয়ত খুন হয়েছে...
বাবা নেশা করে ঘরে ফিরতো...
মা শত চেষ্টা করেও তাকে ঠিক করতে পারেন নি...
পরিনামে শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে মিলতো ভৎর্সনা...
"কেমন মেয়ে মানুষ তুমি??স্বামী কে ঘরে রাখতে পারোনা!!!!"
কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছিলো না...
এর মধ্যে মায়ের জঠরে এলাম আমি...
মা ভেবেছিলেন আমার আগমনে হয়তোবা সব ঠিক হবে...
যেদিন আমার জন্ম হলো...
তার দুইদিনের মাথায় বাবা চিরতরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন...
মা আমার দিশেহারা হয়ে গেছিলেন....
সবার কাছে আমি হয়ে গেলাম কুফা বাচ্চা আর আমার মা অপয়া নারী...
আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো....আমাকে তার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো...
লজ্জায়,অপমানে জননী আমার নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন....
আমি কখনো আমার মাকে দেখিনি...
কিন্তু ডায়েরী টার এক ফাঁকে একটা সাদাকালো ছবিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো....
হ্যা আমার মায়ের ছবি এটা....
বুকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছি সেদিন...
ইচ্ছা করছিলো দাদা দাদী কে খুন করে ফেলতে....
কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার....
**********************
কাল আমার বিয়ে.....
হ্যা আমার বিয়ে কিন্তু আমার মতামত এর কোন প্রয়োজন নাই এখানে....
আমি জানিনা কার সাথে আমার বিয়ে...
ফুফুকে শুধু দুটো অনুরোধ করতে পেরেছি...
আমার মায়ের শাড়ী টা পরে বিয়ে করতে চাই আমি....
আর আমার বাবাকে একবার দেখতে চাই...
এই জীবনে প্রথম মুখ ফুঁটে কিছু বলেছি আমি....
হ্যা আমার মায়ের শাড়ী টা পরেই বিয়ে হবে আমার...
কিন্ত পরের অনুরোধ টা মঞ্জুর হলো কিনা বুঝতে পারিনি...
বিয়ের দিন সকালে আমাকে ডাকা হলো নিচে একটা ঘরে...
শেকলে বাঁধা নোংরা পোশাক আরর চুলদাড়ি তে চুপ করে বসে থাকা মানুষ টা কে দেখে বুঝতে দেরী হলোনা যে,এটাই আমার পাগল বাবা....
সে নাকি খুব ভয়ানক পাগল....
খুব আক্রমণাত্মক...
তাই তাকে বেধে রাখা....
আমি তার বাঁধন খুলে দিতে বললাম....
সবাই কে চলে যেতে বললাম.....
কেউ রাজী হলোনা....
পরে দাদার পায়ে ধরে চাইলাম এটুক...
দয়া হলো তার....
খুলে দেওয়া হলো বাবার বাঁধন...
কিন্তু সময় একঘণ্টা...
ঘরে বাবা আর আমি...
বাবাকে ডাকলাম...
"ও বাবা,তোমার মেয়ে আমি....দেখো আমার দিকে..."
ফ্যালফ্যাল করে মানুষ টা তাকিয়ে রইলেন...
একটু পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদলেন...
কাঁদলাম আমিও...
এই প্রথম বাপ বেটী তে দেখা....
কোন কথা বললেন না বাবা...
নিজ হাতে তাকে গোসল করালাম...নতুন কাপড় পরালাম...খাইয়ে দিলাম...
বাবাকে নেওয়ার জন্য পাগলা গারদের গাড়ী চলে এলে বাবা নিজেই শেকল পরলেন...
গাড়িতে উঠার আগে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন...
"ক্ষমা করে দিস মা....সুখী হ..."
আর পিছু ফিরে তাকান নি....
সম্ভবত বাবার সাথেও এই শেষ দেখা আমার....
বিয়েতে এক টা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যৌতুক হিসেবে সব কিছু দিয়েছেন দাদা দাদী আমাকে....
আর বিদায় দেওয়ার আগে আমাকে বলেছিলেন,
আমি যেন আরর কখনওই এ বাড়ি তে না আসি....
আমি হেসে বলেছিলাম,
"দয়া করে আমায় আশ্রয় দিয়েছো,বড় করেছো তাই ই অনেক....দোয়া কইরো আর কখনো যেন আমার মরা মুখ টাও না দেখতে হয় তোমাদেরকে...."
গাড়িতে উঠার পর ঘোমটার আড়ালে কেনো জানি দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে....
অচেনা একটা হাত শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো,
"নিশি আমি তোমায় কখনওই আগে দেখিনি...তোমার ছবি দেখেছি শুধু...আমি তোমার সম্পর্ক তে সব ই জেনেছি...তোমার বাবার কাছ থেকে....
উনার চিকিৎসক আমি....
তুমি ভেবোনা আমি অনুগ্রহ করছি তোমার উপর....
আমি নিজেই তোমার দাদার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম...আর উনি যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছিলেন আমি সবব ফিরিয়ে দিয়েছি....
আজ থেকে তুমি আমার আমানত..."
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম....
অচেনা একটা কাধ যে নির্ভরতার আশ্রয় হয়ে যেতে পারে নিমিষেই...
জানা ছিলোনা.... ডাকা নিষেধ ছিলো...
কারন সে ছিলো পাগল....
পাগলদের "পাগল" ছাড়া আর কোন পরিচয় থাকেনা...
আমার মা ছিলোনা...
শুনেছিলাম আমার মা একজন ভয়ানক খারাপ মহিলা..
সে আমাকে ফেলে চলে গেছিলো....
ছোটবেলাতে আমাকে এভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলা হয়েছিল...
আমি জানতাম যে,আমার জন্মদাতা পাগল আর জন্মদাত্রী ডাইনী....
"বাবা-মা" শব্দ দুটির সাথে আমি পরিচিত হয়েছিলাম প্রথম যেদিন স্কুলে যাই তখন...
স্কুলের বাকি ছেলে মেয়েদেরকে কিছু লোকজন নিতে আসছিলো...
যাদের কে তারা বাবা-মা বলে ডাকছিল...
আর আমাকে নিতে গেছিলো "নিতা মিস"
আমাকে দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলা কে রাখা হয়েছিলো সে....
আমার কোন মানুষ বন্ধুবান্ধব ছিলোনা....
বন্ধু বলতে ছিলো প্রচুর খেলনা....
আমি স্কুলে যাবার আগে জানতাম না যে,মানুষ দের সাথে খেলা যায়....
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা...
অর্থ-প্রাচুর্য...সব ছিল...
দাদা-দাদী আমাকে সব কিছু দিয়েছিলেন...
শুধুমাত্র স্নেহ ছাড়া....
একবার স্কুলে আমার এক ক্লাসমেট জিজ্ঞাসা করেছিলো,"তোমার বাবা-মা কেন তোমায় নিতে আসেনা?তোমার কি বাবা মা নাই?"
আমি বাড়ি ফিরে দাদী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম...
"বাবা-মা কি?আমার কেন বাবা মা নাই?"
দাদী তখন আমাকে বলেছিলেন,"পাগলের জন্ম তুই...আর মা তো তোর ডাইনী....আবার বাবা মা খোঁজে....শখ কত!!!!"
ছোট্ট আমি খুব কেঁদেছিলাম সেদিন...
আর কখনো বাবা মার কথা জিজ্ঞাসা করিনি...
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে....
কিছুতেই তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিলো না...
অনেক কাকুতিমিনতি করে মানুষ টা আমার সাথে ১০ মিনিট এর জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন...
কিন্তু কাজের লোকের উপস্থিতি তে...
জীবনে এই প্রথম কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো...
আমি অবাক হয়েছিলাম খুব...
মানুষ টা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন...
তার বুকের মধ্যে খুব আপন লাগছিলো আমার...
কারন সে আমার মামা ছিল...
মামা লুকিয়ে আমাকে একটা ডায়েরী আর একটা বিয়ের শাড়ী দিয়ে গেছিলেন...
ওটা নাকি আমার মায়ের বিয়ের শাড়ী ছিলো..
মাথায় হাত দিয়ে অনেক দোয়া করেছিলেন আমাকে...
এরপর আর কোনদিন মামাকে দেখিনি আমি...
ডায়েরী টা পড়ে জানতে পেরেছিলাম সব....
আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের আগে অন্যকেউ ছিলো...সে যাবার পর বাবার হৃদয়ের গহীন টা এতই আধার হয়ে গেছিলো যে,আমার মা সেখানে আর আলো আনতে পারেন নি...
নিজের অনিচ্ছাতে শুধুমাত্র বাবা মায়ের চাপে আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন বাবা....
মাকে কখনো শারিরীক ভাবে আঘাত করেন নি তিনি...
কিন্তু মানসিক ভাবে আমার মা প্রতিনিয়ত খুন হয়েছে...
বাবা নেশা করে ঘরে ফিরতো...
মা শত চেষ্টা করেও তাকে ঠিক করতে পারেন নি...
পরিনামে শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে মিলতো ভৎর্সনা...
"কেমন মেয়ে মানুষ তুমি??স্বামী কে ঘরে রাখতে পারোনা!!!!"
কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছিলো না...
এর মধ্যে মায়ের জঠরে এলাম আমি...
মা ভেবেছিলেন আমার আগমনে হয়তোবা সব ঠিক হবে...
যেদিন আমার জন্ম হলো...
তার দুইদিনের মাথায় বাবা চিরতরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন...
মা আমার দিশেহারা হয়ে গেছিলেন....
সবার কাছে আমি হয়ে গেলাম কুফা বাচ্চা আর আমার মা অপয়া নারী...
আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো....আমাকে তার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো...
লজ্জায়,অপমানে জননী আমার নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন....
আমি কখনো আমার মাকে দেখিনি...
কিন্তু ডায়েরী টার এক ফাঁকে একটা সাদাকালো ছবিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো....
হ্যা আমার মায়ের ছবি এটা....
বুকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছি সেদিন...
ইচ্ছা করছিলো দাদা দাদী কে খুন করে ফেলতে....
কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার....
**********************
কাল আমার বিয়ে.....
হ্যা আমার বিয়ে কিন্তু আমার মতামত এর কোন প্রয়োজন নাই এখানে....
আমি জানিনা কার সাথে আমার বিয়ে...
ফুফুকে শুধু দুটো অনুরোধ করতে পেরেছি...
আমার মায়ের শাড়ী টা পরে বিয়ে করতে চাই আমি....
আর আমার বাবাকে একবার দেখতে চাই...
এই জীবনে প্রথম মুখ ফুঁটে কিছু বলেছি আমি....
হ্যা আমার মায়ের শাড়ী টা পরেই বিয়ে হবে আমার...
কিন্ত পরের অনুরোধ টা মঞ্জুর হলো কিনা বুঝতে পারিনি...
বিয়ের দিন সকালে আমাকে ডাকা হলো নিচে একটা ঘরে...
শেকলে বাঁধা নোংরা পোশাক আরর চুলদাড়ি তে চুপ করে বসে থাকা মানুষ টা কে দেখে বুঝতে দেরী হলোনা যে,এটাই আমার পাগল বাবা....
সে নাকি খুব ভয়ানক পাগল....
খুব আক্রমণাত্মক...
তাই তাকে বেধে রাখা....
আমি তার বাঁধন খুলে দিতে বললাম....
সবাই কে চলে যেতে বললাম.....
কেউ রাজী হলোনা....
পরে দাদার পায়ে ধরে চাইলাম এটুক...
দয়া হলো তার....
খুলে দেওয়া হলো বাবার বাঁধন...
কিন্তু সময় একঘণ্টা...
ঘরে বাবা আর আমি...
বাবাকে ডাকলাম...
"ও বাবা,তোমার মেয়ে আমি....দেখো আমার দিকে..."
ফ্যালফ্যাল করে মানুষ টা তাকিয়ে রইলেন...
একটু পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কাঁদলেন...
কাঁদলাম আমিও...
এই প্রথম বাপ বেটী তে দেখা....
কোন কথা বললেন না বাবা...
নিজ হাতে তাকে গোসল করালাম...নতুন কাপড় পরালাম...খাইয়ে দিলাম...
বাবাকে নেওয়ার জন্য পাগলা গারদের গাড়ী চলে এলে বাবা নিজেই শেকল পরলেন...
গাড়িতে উঠার আগে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন...
"ক্ষমা করে দিস মা....সুখী হ..."
আর পিছু ফিরে তাকান নি....
সম্ভবত বাবার সাথেও এই শেষ দেখা আমার....
বিয়েতে এক টা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যৌতুক হিসেবে সব কিছু দিয়েছেন দাদা দাদী আমাকে....
আর বিদায় দেওয়ার আগে আমাকে বলেছিলেন,
আমি যেন আরর কখনওই এ বাড়ি তে না আসি....
আমি হেসে বলেছিলাম,
"দয়া করে আমায় আশ্রয় দিয়েছো,বড় করেছো তাই ই অনেক....দোয়া কইরো আর কখনো যেন আমার মরা মুখ টাও না দেখতে হয় তোমাদেরকে...."
গাড়িতে উঠার পর ঘোমটার আড়ালে কেনো জানি দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে....
অচেনা একটা হাত শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো,
"নিশি আমি তোমায় কখনওই আগে দেখিনি...তোমার ছবি দেখেছি শুধু...আমি তোমার সম্পর্ক তে সব ই জেনেছি...তোমার বাবার কাছ থেকে....
উনার চিকিৎসক আমি....
তুমি ভেবোনা আমি অনুগ্রহ করছি তোমার উপর....
আমি নিজেই তোমার দাদার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম...আর উনি যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছিলেন আমি সবব ফিরিয়ে দিয়েছি....
আজ থেকে তুমি আমার আমানত..."
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম....
অচেনা একটা কাধ যে নির্ভরতার আশ্রয় হয়ে যেতে পারে নিমিষেই...
জানা ছিলোনা....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন